স্বদেশ ডেস্ক:
দুর্দান্ত জয় পেল পাকিস্তান। ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে মঙ্গলবার টি-২০ সিরিজের শেষ ম্যাচে শেষ ওভারে স্বাগতিক দলকে ৫ রানে হারিয়েছে পাকিস্তান। এর ফলে তিন ম্যাচ সিরিজটি ১-১-এ শেষ হলো। প্রথম টি-টোয়েন্টি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর দ্বিতীয়টিতে জেতে ওয়েন মর্গ্যানের দল।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান নির্ধারিত ২০ ওভারে করেছিল ৪ উইকেটে ১৯০ রান। জবাবে ইংল্যান্ড শেষ করে ৮ উইকেটে ১৮৫ রান।
জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ২০ রান, হাতে ছিল ৪ উইকেট। দারুণ বোলিং-ফিল্ডিংয়ে ১৯তম ওভারে পাকিস্তানের দিকে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন ওয়াহাব রিয়াজ। দলে ফেরা বাঁহাতি এই পেসার সরাসরি থ্রোয়ে ক্রিস জর্ডানকে রান আউট করার পর নেন মইনের ফিরতি ক্যাচ।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি পাকিস্তানের। দ্বিতীয় ওভারে মইনের স্টাম্প সোজা বলে বোল্ড হয়ে যান ফখর জামান।
তিন চারে ২১ রান করা বাবরকেও বোল্ড করে থামান টম কারান। ৩২ রানে দুই ওপেনারকে হারানো পাকিস্তান এগিয়ে যায় ক্যারিয়ারের দুই প্রান্তে থাকা দুই ব্যাটসম্যানের দৃঢ়তায়।
১৯ বছর বয়সী হায়দার আলির সঙ্গে শতরানের জুটি উপহার দেন ৩৯ বছর বয়সী হাফিজ। ক্রিজে গিয়ে দ্বিতীয় বলেই ছক্কা হাঁকানো হায়দার টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকে করেন ফিফটি।
৩৩ বলে পাঁচ ছক্কা ও দুই চারে ৫৪ রান করা এই তরুণের বিদায়ে ভাঙে ১০০ রানের জুটি। টানা দ্বিতীয় ফিফটি পাওয়া হাফিজ দলকে নিয়ে যান দুইশ রানের কাছে।
এদিনও খেলেছেন দারুণ সব পুল ও স্ট্রেইট ড্রাইভ। ৫২ বলে ছয় ছক্কা ও পাঁচ চারে ৮৬ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। এই সংস্করণে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এটাই পাকিস্তানের কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ।
রান তাড়ায় চতুর্থ বলেই ভাঙে ইংল্যান্ডের শুরুর জুটি। দারুণ এক ডেলিভারিতে জনি বেয়ারস্টোকে বোল্ড করে দেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। আগের ম্যাচে অপরাজিত ফিফটিতে জয় নিয়ে ফেরা দাভিদ মালান যেতে পারেননি দুই অঙ্কে; ইমাদ ওয়াসিমের বলে সীমানায় চমৎকার ক্যাচ নেন ফখর।
দারুণ ছন্দে থাকা ওয়েন মর্গ্যান শুরু করেছিলেন এবারও। কিন্তু রান আউটে ১০ রানেই থামেন ইংলিশ অধিনায়ক।
স্পিনারদের রিভার্স সুইপে এলোমেলো করে দেওয়া টম ব্যান্টন দেখাচ্ছিলেন পথ। প্রথম ওভারে খরুচে বোলিং করা হারিস রউফ পরে ফিরে দারুণ এক ডেলিভারিতে থামান এই ওপেনারকে। ৩১ বলে খেলা তার ৪৬ রানের ইনিংস গড়া ৮ চারে।
৬৯ রানে প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে তখন বিপদে ইংল্যান্ড।
বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া মইন শুরুতেই সহজ একটা সুযোগ দিয়েছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ানের জায়গায় ফেরা সরফরাজ আহমেদকে। অনেক সময় পেলেও স্টাম্পিং করতে পারেননি অভিজ্ঞ এই কিপার।
স্যাম বিলিংসের সঙ্গে ৫৭ রানের জুটি গড়া মইন পরে চড়াও হন বোলারদের ওপর। শাদাব খানের এক ওভারে তিন ছক্কায় নেন ২০ রান। তাকে কিছুটা সঙ্গ দেওয়া লুইস গ্রেগোরিকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন আফ্রিদি।
এরপর ওয়াহাবের দারুণ ওভারে ৩ রান তুলতেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে ইংল্যান্ড। বিশেষ করে ৩৩ বলে চারটি করে ছক্কা ও চারে ৬১ রান করা মইনের বিদায়ে ম্যাচ ঘুরে যায় পাকিস্তানের দিকে।
জয়ের জন্য শেষ ২ বলে প্রয়োজন ছিল ১২ রান। কাভার দিয়ে রউফকে ছক্কা হাঁকিয়ে অসাধারণ কিছুর সম্ভাবনা জাগান কারান। শেষ বলে ছক্কায় নায়ক হওয়ার সুযোগ ছিল তার সামনে। কিন্তু ওয়াইড ইয়র্কারে ব্যাটই ছোঁয়াতে পারেননি তিনি।
২৬ রানে ২ উইকেট নেন ওয়াহাব। আগের ম্যাচে খরুচে বোলিং করা আফ্রিদি ২ উইকেট নেন ২৮ রানে।
টানা দুই ফিফটি পাওয়া হাফিজ জেতেন ম্যাচ ও সিরিজ সেরার পুরস্কার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৯০/৪ (বাবর ২১, ফখর ১, হায়দার ৫৪, হাফিজ ৮৬*, শাদাব ১৫, ইমাদ ৬*; মাহমুদ ৪-০-৩৭-০, মইন ১-০-১০-১, জর্ডান ৪-০-২৯-২, কারান ৪-০-৩২-১, গ্রেগোরি ৪-০-৪১-০, রশিদ ৩-০-৪০-০)
ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৮৫/৮ (ব্যান্টন ৪৬, বেয়ারস্টো ০, মালান ৭, মর্গ্যান ১০, মইন ৬১, বিলিংস ২৯, গ্রেগোরি ১২, জর্ডান ১, কারান ৮, রশিদ ৩*; আফ্রিদি ৪-০-২৮-২, ইমাদ ৪-০-৩৫-১, রউফ ৪-০-৪১-১, ওয়াহাব ৪-০-২৬-২, শাদাব ৪-০-৪৮-০)
ফল: পাকিস্তান ৫ রানে জয়ী
সিরিজ : ৩ ম্যাচের সিরিজ ১-১ ড্র
ম্যান অব দা ম্যাচ : মোহাম্মদ হাফিজ
ম্যান অব দা সিরিজ : মোহাম্মদ হাফিজ